গত কয়েকদিন ধরেই সাধারণ মানুষের আলোচনায় ছিল ১০ ডিসেম্বর। সে দিন কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহল যেমন ছিল, তার সঙ্গে ছিল উদ্বেগও। তবে সুষ্ঠু ভাবেই ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এ দিনকে ঘিরে যতটা উদ্বেগ ছিল, তেমন কিছুই ঘটেনি সেদিন।
তবে এই দিনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনার ক্ষত বয়ে বেরাচ্ছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ ২২৪ জন নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন।
এছাড়াও, গত ০৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন মকবুলর হোসেন। যিনি বিএনপির কর্মী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেক।
সংসদ থেকে সাত এমপির পদত্যাগ
সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা বিএনপির এমপিদের
১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশে বিএনপির সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপরই রোববার জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। সে সময় সশরীরে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনের জি এম সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান ও সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানা। এই পাঁচ জনের এমপি পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় সশরীরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেননি। এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুন উর রশীদ বিদেশে থাকায় তিনি স্পিকারের কাছে যেতে পারেননি। তাদের স্বাক্ষর সংবলিত পদত্যাগপত্র স্পিকারের হাতে দেন দলীয় হুইপ রুমিন ফারহানা। তবে আবেদন যথাযথ না হওয়ায় মো. হারুন অর রশিদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে, জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির এই সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগ দলটির জন্য বড় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে বিএনপির যত ক্ষতি
বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের যত ক্ষতি
০৭ ডিসেম্বর সংঘর্ষের পরই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে নেতাকর্মীদের আটক করে পুলিশ। তারপর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল। শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ হয়। গণসমাবেশের পর দিন রোববার কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়। এরপর দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পারে দলটির নেতাকর্মীরা। প্রবেশের পর কার্যালয় ঘুরে দেখেছেন দলটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি অভিযোগ করেছেন, কার্যালয়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র খোয়া গেছে।
কার্যালয়ের যা যা খোয়া গেছে
এ বিষয়ে এমরান সালেহ প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দলীয় চেয়ারপার্সনের কক্ষের দরজা ভাঙা। কক্ষে যে জিনিসপত্র ছিল, তা নেই। দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দপ্তরে তাঁরা স্কাইপে সভা করেন। স্কাইপের মনিটর, সিপিইউ, ফাইলপত্রসহ কিছু সেখানে নেই। হিসাব বিভাগে কম্পিউটার, সিপিইউসহ কিছু নেই। টাকা রাখার ড্রয়ারও ভাঙা। সেখানে টাকা পাওয়া যায়নি। চেকবই পাওয়া যায়নি। কম্পিউটার, সিপিইউ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ল্যাপটপ খোয়া গেছে। ফাইলপত্রগুলো নেই। ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দল, মহিলা দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দপ্তরগুলোও তছনছ করা হয়েছে।’
গুরুত্বপূর্ণ নথি ও যন্ত্র খোয়া যাওয়ার বিষয়ে আইনগত কোন পদক্ষেপ নেবেন কি না, জানতে চাইলে সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, ‘কী কী জিনিস খোয়া গেছে, তার তালিকা করবেন তাঁরা। এরপর দলের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন নেতা।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিজয়ের মাসে জাতীয়তাবাদী দলের অফিস পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী তছনছ করেছে। লুটপাট করেছে। লন্ডভন্ড করেছে। নগ্ন ভাবে সন্ত্রাস করেছে। তারা নজিরবিহীন বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কার্যালয়ের দোতলায় চেয়ারপারসনের অফিস বন্ধ থাকে। সে অফিস দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে তছনছ করেছে। যত ছবি ছিল ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তিন তলাও তছনছ করেছে। সেখান থেকে আমাদের সব উপকরণ কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, আমাদের ফাইলপত্র, সব নথিপত্র তারা নিয়ে গেছে।
এছাড়া, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব অফিস থেকে কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, টেলিভিশন, প্রিন্টার সবকিছু নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের যে একটি হিসাব শাখা আছে, সেখান থেকে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। নিচতলায় থাকা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে।’ এসবের প্রতিবাদে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তছনছ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজধানীর পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জব্দ তালিকার বাইরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ কিছু আনেনি।’
গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশ শুরু: মাঠ ছাড়িয়ে মহাসড়কে নেতাকর্মীদের ঢল